গত মাসে ট্রেনিং এর জন্য পাবনা গিয়েছিলাম। বেশ এক্সসাইটেড ছিলাম। পাবনা যাওয়ার আগে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিলাম 'পাবনা যাচ্ছি কাল সকালে। পাবনার কি কি বিখ্যাত? ' বন্ধুরা কমেন্ট দিল-
- ঘটনা কি? কবে পাগল হইলা?
- জানাইতা আগে উইশ করতাম।
- শেষ ইচ্ছা তাইলে এইটাই না?
- পাগলাগারদ ? লুল
আমিও বললাম - কারো বুকিং লাগবো নাকি?
এই প্রথম অনেকটা দুরের পথ আমি একা গেলাম। ভালো লাগল অনেক।
তাই কয়েকটা ছবি তুলার পর আর তুললাম না। আমাদের দেখে মানসিক ভারসাম্যহিন সেই মানুষগুলো সালাম দিচ্ছিল। ( আমার পাগল শব্দটা ইউজ করতে ভালো লাগছেনা)
'আফা আসসালামুয়ালিকুম!' আফা কেমন আছেন?
আফা ক্যামেরা আনেন নাই? একটা ছবি তুলেন।
আমরা বললাম না, ক্যামেরাত আনি নাই ভাই।
অনেক কথা বলছিল তারা। একজন বলছিল কেন সে এখানে থাকে। একটা জায়গায় গিয়ে দাড়াই আমরা। সেখানে সবাই কথা বলছিল একসাথে। তাদের মাঝে একজন সবাইকে ধমক দিয়ে বলল 'সাইলেন্ট! তোমরা বেশি কথা বল'। আম
আমি তার কথা শুনে তাকে জিজ্ঞেস করলাম ' আপনি কি পড়াশুনা করেছেন? ছেলেটার জবাব - হ্যাঁ। আমি ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে
mathemtics এ মাস্টার্স করেছি এবং উনি 1st class পেয়েছেন। শুনে অনেক অবাক হলাম। কথাগুলো বেশ সুন্দর করে বলছিলেন। আমাদের বলল, আপা কবিতা শুনবেন? দৌড়ে গিয়ে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে আসল আর আবৃতি করল একটা কবিতা। কবিতার নাম ' প্রেম' । সুন্দ
জিজ্ঞেস করল ছেলেটা ,আমরা কি গাড়ি নিয়ে এসেছি কিনা? সে বলছিল- আপনারা গাড়ি না আনলে কোন সমস্যা নাই। আমাদের ১০ টা গাড়ি আছে। এখনি ফোন দিলে গাড়ি চলে আসবে। জিজ্ঞেস করালাম বাসা কোথায়? বলল উত্তরা , ৬ তলা বিল্ডিং । সততা
construction তাদের। আরও অনেকগুলো রুমের সামনে গেলাম। কিন্তু তাদের দেখে অনেক খারাপ লাগছিল। চোখ দুটি আপনি ভিজে উঠল। কেউ আমাদের দেখে গান করছিল, কেউবা চুপ করে দেখছিল, কেউবা টাকা চাচ্ছিল।
শুধু বার বার মনে হচ্ছিল এই মানুষগুলো কোন মায়ের ছেলে, কারো বা ভাই, কারো বা বাবা ।
সেই মানুষগুলোর কত না দুঃখ এই মানুষগুলোর জন্য। কতটা কষ্ট বুকে পুষে রেখেছেন সেই মানুষগুলো, কেউ জানিনা আমরা কেউ জানিনা।
সেখান থেকে বের হয়ে আসার পর স্বাভাবিক হতে পারছিলাম না। কেন জানি খুব কষ্ট লাগছিল। আর সেই ছেলেটার কথা মনে পরছিল। যে ঢাকা ইউনিভারসিটিতে পড়াশুনা করেছেন। খুব মায়া লাগছিল ছেলেটার জন্য। আর একজন এই ছেলের মত শিক্ষিত ছিল। তার ইংলিশ উচ্চারন ব্রিটিশ উচ্চারনের মত ছিল। এই মানুষগুলোর জন্য আমাদের সবার খারাপ লাগছিল।
আমরা কত মজা করি এই ভারসাম্যহিন মানুষগুলো নিয়ে! না আর যেন আমরা মজা না করি। পাবনার কথা শুনে আমরা যেন পাগলাগারদ যাচ্ছি কিনা বলে মজা না করি।
আমরা দুয়া করি আল্লাহ যেন আর কোন মায়ের সন্তান কে মানসিক ভারসাম্যহিন না বানায়। আর কোন মায়ের বুক খালি করে পাবনা হেমায়েতপুর না পাঠায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




